ফরিদপুর জেলা

ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের একটি জেলা ও প্রশাসনিক অঞ্চল। ফরিদপুর শহর বাংলাদেশের ১৪ তম বৃহত্তম শহর, উপজেলার সংখ্যানুসারে ফরিদপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[

ফরিদপুর শহরটির পুরনো নাম ছিল ফতেহাবাদ। মরা পদ্মা নামে একটি নদীর তীরে এই শহরটির অবস্থান ছিল, যেটি মূল পদ্মা নদী থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ছিল। পঞ্চদশ শতকের শুরুর দিকে সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ফতেহাবাদে একটি টাঁকশাল স্থাপন করেছিলেন। ১৫৩৮ সাল পর্যন্ত ফতেহাবাদ বাংলা সুলতানির টাঁকশাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্রাট আকবরের মুঘল সাম্রাজ্যকালে ‘আইন-ই-আকবরী’-তে শহরটি ‘হাওয়েলি মহল ফতেহাবাদ’ নামে উল্লেখিত হয়। পর্তুগিজ মানচিত্রকার জোয়াও দে ব্যারোস একে ‘ফাতিয়াবাস’ নামে উল্লেখ করেছেন। ভ্যান ডেন ব্রুকের ওলন্দাজ মানচিত্রে একে ‘ফাথুর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যে এই শহরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কবি দৌলত উজির বাহরাম খানের লেখা লায়লি-মজনু উপাখ্যানে। বিখ্যাত মধ্যযুগীয় কবি আলাওল ফরিদপুরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল ফতেহাবাদ। এটি একটি সু-বিকশিত নগর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি ছিল। শহরে গুরুত্বপূর্ণ মুঘল সরকারি কর্মকর্তারা, যেমন জেনারেল, বেসামরিক কর্মচারী এবং জায়গিরদারদের বসবাস ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে, সতেরো শতকে, স্থানীয় জমিদার সত্রাজিত ও মুকুন্দ মুঘল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। উনিশ শতকে আজমীর চিশতিয়া তরিকার অনুসারী সুফি সাধক শাহ ফরিদ উদ্দিন মাসুদের সম্মানে শহরটির নামকরণ করা হয় ফরিদপুর। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং দুদু মিয়া ফরিদপুরে রক্ষণশীল ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

১৭৮৬ সালে ব্রিটিশরা ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠা করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকা বিভাগের অধীনে ছিল ফরিদপুর মহকুমা। ১৮৬৯ সালে ফরিদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মহকুমা বর্তমান ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ জেলাগুলো (সম্মিলিতভাবে যা বৃহত্তর ফরিদপুর নামে পরিচিত) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৯০৫ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজের সময় এটি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ফরিদপুর ছিল বেঙ্গল প্রোভিন্সিয়াল রেলওয়ে এবং ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের একটি রেল টার্মিনাস যা কলকাতাকে গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ ঘাটের সাথে সংযুক্ত করেছিল। এখান থেকেই জাহাজগুলো তৎকালীন ঔপনিবেশিক আসাম ও বার্মায় চলাচল করত। ব্রিটিশ ফরিদপুর বেশ কয়েকজন উপমহাদেশীয় জাতীয়তাবাদী নেতার জন্মস্থান ছিল, যাদের মধ্যে ছিলেন অম্বিকা চরণ মজুমদার, হুমায়ূন কবির, মৌলভী তমিজউদ্দিন খান, শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ কুমরুল ইসলাম সালেহ উদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং কে.এম ওবায়দুর রহমান। বাংলাদেশের প্রগতিশীল সংস্কৃতি, সাহিত্য ও নাট্যজগতের পথিকৃৎ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষক – নাট্যগুরু নূরুল মোমেন বর্তমান ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বুরাইচ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রখ্যাত আমেরিকান প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খানও এই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুর তীব্র লড়াইয়ের সাক্ষী হয়। এটি স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের আঠারোটি মহকুমার একটি ছিল। ১৯৮৪ সালে, রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিকেন্দ্রীকরণ সংস্কার পুরানো মহকুমাকে পাঁচটি জেলায় বিভক্ত করে। ২০১৫ সালে, বাংলাদেশ সরকার ফরিদপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

 

 

প্রশাসনিক বিভাজন

[সম্পাদনা]

ফরিদপুর জেলায় ৯টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা, ৩৬টি ওয়ার্ড, ১০০টি মহল্লা, ৮১টি ইউনিয়ন এবং ১,৮৯৯টি গ্রাম রয়েছে। জাতীয় সংসদে জেলার ৪টি আসন রয়েছে। ফরিদপুর জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্তর।

উপজেলা গুলোর তালিকা

[সম্পাদনা]

পৌরসভা গুলোর তালিকা

[সম্পাদনা]

জাতীয় সংসদীয় আসন

[সম্পাদনা]

বিষয়শ্রেণী:ফরিদপুর জেলার জাতীয় সংসদীয় বিলুপ্ত আসন

[সম্পাদনা]

“১৯৮৪ সালের পর ফরিদপুর জেলার জাতীয় সংসদীয় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আসন গুলো” বিষয়শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত নিবন্ধসমূহ এই বিষয়শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত মোট ১৫টি পাতার মধ্যে ১৫টি পাতা নিচে দেখানো হল।


  • ফরিদপুর-৫
  • ফরিদপুর-৬
  • ফরিদপুর-৭
  • ফরিদপুর-৮
  • ফরিদপুর-৯
  • ফরিদপুর-১০
  • ফরিদপুর-১১
  • ফরিদপুর-১২
  • ফরিদপুর-১৩
  • ফরিদপুর-১৪
  • ফরিদপুর-১৫
  • ফরিদপুর-১৬
  • ফরিদপুর-১৭
  • ফরিদপুর-১৮
  • ফরিদপুর-১৯

    উল্লেখযোগ্য মেলা

    [সম্পাদনা]

    জনপরিসংখ্যান

    [সম্পাদনা]
    ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
    বছরজন.ব.প্র. ±%
    ১৯৭৪১১,২০,০৩১—    
    ১৯৮১১৩,১৪,০০৪+২.৩১%
    ১৯৯১১৫,০৫,৬৮৬+১.৩৭%
    ২০০১১৭,৫৬,৪৭০+১.৫৫%
    ২০১১১৯,১২,৯৬৯+০.৮৬%
    ২০২২২১,৬২,৮৭৯+১.১২%
    তথ্যসূত্র:[][]

    ২০২২ সালের বাংলাদেশের আদমশুমারি অনুযায়ী, ফরিদপুর জেলায় ৫২৫,৮৭৭ টি পরিবার এবং মোট জনসংখ্যা ২,১৬২,৮৭৯ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,০৫৪ জন। ফরিদপুর জেলার সাক্ষরতার হার (৭ বছর ও তার বেশি বয়সীদের জন্য) ছিল ৭২.১৩%, যা জাতীয় গড় ৭৪.৮০% এর তুলনায় কম। পুরুষ-মহিলা অনুপাত ছিল প্রতি ১০০০ পুরুষের বিপরীতে ১০৫৯ জন মহিলা। ৪১৫,৬৯২ জন (১৯.২২%) শিশু (১০ বছরের কম বয়সী)। জনসংখ্যার ২৩.৮৩% শহরাঞ্চলে বাস করে। []

    ফরিদপুর জেলার ধর্মীয় পরিসংখ্যান (২০২২)[]
    ধর্মঅনুপাত
    ইসলাম
      
    ৯১.৪৯%
    হিন্দু
      
    ৮.৪৪%
    অন্যান্য
      
    ০.০৭%
    বর্তমান ফরিদপুর জেলায় ধর্ম
    ধর্মজনসংখ্যা (১৯৪১)[]:৯৮–৯৯অনুপাত (১৯৪১)জনসংখ্যা (২০২২)অনুপাত (২০১১)
    ইসলাম৪৮১,৫৮৩৬৯.২৮%১,৯৭৯,৯০০৯১.৪৯%
    হিন্দু২১২,৮২২৩০.৬২%১৮২,৫৪৮৮.৪৪%
    অন্যান্য৭৩৮০.১১%১,৪৩১০.০৭%
    মোট জনসংখ্যা৬৯৫,১৪৩১০০%২,১৬২,৮৭৯১০০%

    ফরিদপুর জেলায় জনসংখ্যার ৯১.৪৯% মুসলিম এবং ৮.৪৪% হিন্দু। ১৯৮১ সালে যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১.৯৫ লক্ষ, তা আজ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৮ লক্ষেরও কিছু বেশি।

    ইতিহাস ও ঐতিহ্য

    [সম্পাদনা]

    ভাষা ও সংস্কৃতি

    [সম্পাদনা]

    সৃষ্টির পর থেকেই পৃথিবীর সব মানব গোষ্ঠিই তাদের নিজ নিজ কামনা-বাসনা, চাওয়া-পাওয়া, ব্যথা-বেদনা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিরাহ প্রকাশ করে আসছে।বিভিন্নভাবে প্রকাশের এই মাধ্যমই হচ্ছে সাহিত্য। যে জাতির ভাসা, সাহিত্যসমৃদ্ধ সে জাতি তত সমৃদ্ধ। আমরা বাঙালী আমাদের অতীত সাহিত্যের ঐতিহ্যরয়েছে। লোক সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল ভান্ডার। ফরিদপুরের নিজস্বসংস্কৃতিও এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মত। লোকগীতি, লোকসংগীতি, পল্লীগীতি, বাউলগানের বিখ্যাত মরমী লোক কবি ও চারণ কবিদের লালন ক্ষেত্র এ ফরিদপুরে। এজেলার অনুকুল আবহাওয়া ও পরিবেশ এদের লালন করেছে আর যুগে যুগে উপাদান ওউপকরণ সরবরাহ করে মরমী ও লোক কবিদের সাধনা ক্ষেত্রে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।পল্লী কবি জসীমউদ্দিন, তাইজদ্দিন ফকির, দেওয়ান মোহন, দরবেশ কেতারদি শাহ, ফকির তীনু শাহ, আজিম শাহ, হাজেরা বিবি, বয়াতি আসাদুজ্জামান, আবদুর রহমানচিশতী, আঃ জালাল বয়াতি, ফকির আব্দুল মজিদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

    বাংলাদেশের সংস্কৃতাঙ্গনে ফরিদপুরের লোকগানের উল্লেখযোগ্য ভহমিকা রয়েছে।এর প্রমাণ পাওয়া যায় মুহম্মদ মুনসুর উদ্দিনের ‘হারামনি’বাংলা একাডেমী প্রকাশিত লোক সাহিত্য ও ফোকলোর সংকলন সমূহ, আশুতোষ ভট্টাচার্যের, বাংলার লোকসাহিত্য, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের, বাংলার বাউল ও বাউল গান, ডঃ আশরাফসিদ্দিকীর, লোক সাহিত্য, জসীম উদদীনের জারীগান ও মুর্শিদ গান, প্রভৃতি লোকগবেষণামূলক গ্রন্থে।

    সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব :

    ·পল্লীকবি জমীস উদদীন

    ·তাইজদ্দিন ফকির

    ·দেওয়ান মোহন

    ·দরবেশ কেতাবদি শহ

    ·ফকির তীনু শাহ

    ·আজিম শাহ

    ·হাজেরা বিবি

    ·বয়াতি আসাদুজ্জামান

    ·আবদুর রহমান চিশতী

    ·আঃ জালাল বয়াতি

    ·বাউল গুরু মহিন শাহ

    ·ফকির আব্দুল মজিদ

    ·কোরবান খান

    ·ছইজদ্দিন ফকির

    ·আজাহার মন্ডল

    ·আব্দুর রাজ্জাক বয়াতি

    ·বাউল রহমান সাধু

    ·মেঘু বয়াতি

    ·ডাঃ হানিফা

    ·শেখ সাদেক আলী

    সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানঃ

    ক্রমিক নংনামসংখ্যা
    ক্লাব৪৭৯টি
    পাবলিক লাইব্রেরী০৯টি
    যাদু ঘর০১টি
    নাট্যমঞ্চ০৬টি
    নাট্যদল৩০টি
    যাত্রা দল০৩টি
    সাহিত্য সমিতি২৮টি
    মহিলা সংগঠন৬৬টি
    সিনেমা হল১২টি
    ১০কমিউনিটি সেন্টার১০টি
    ১১শিল্পকলা একাডেমী০১টি
    ১২খেলার মাঠ৭১টি

    উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

    [সম্পাদনা]
  • 1 thought on “ফরিদপুর জেলা”

    Leave a Reply to tawhid Cancel Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Scroll to Top